এমএসএমই খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণ

আহসান জামান চৌধুরী: বাংলাদেশের সিএমএসএমই খাত সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। দেশে এখন ১ কোটির বেশি এসএমই উদ্যোগ সক্রিয় রয়েছে এবং ৩ কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৭ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।

এই খাতের উদ্যোক্তাদের যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা কি দেশে আছে?

আহসান জামান চৌধুরী: সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যেতে হলে মূলত চারটি ধরনের সহায়তা জরুরি—অর্থায়নের সহজপ্রাপ্যতা, দক্ষতা উন্নয়ন, বাজার সংযোগ ও ডিজিটাল সক্ষমতা। দেশের নীতিনির্ধারক মহল এ বিষয়গুলো অনেকটাই উপলব্ধি করেছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই নীতিমালা, পুনঃ অর্থায়ন স্কিম, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম—এসব উদ্যোগ উদ্যোক্তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়ক হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক উদ্যোক্তা এখনো ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অনভ্যস্ত, ব্যবসার হিসাব-নিকাশ আনুষ্ঠানিক নয়, জামানতের শর্ত পূরণ করা কঠিন—এসব কারণে অনেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পান না।

এই খাতে আপনাদের ঋণের পরিমাণ ও গ্রাহক সংখ্যা কেমন?

আহসান জামান চৌধুরী: ট্রাস্ট ব্যাংক বর্তমানে এসএমই খাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার একটি সক্রিয় ঋণ দিচ্ছে। এই খাতভুক্ত ঋণসেবার আওতায় রয়েছেন প্রায় আট হাজার উদ্যোক্তা, যাঁরা বিভিন্ন স্তরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় জড়িত।

এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া কতটা সহজ হয়েছে?

আহসান জামান চৌধুরী: গত কয়েক বছরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংক উপশাখা এবং বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকের দোরগোড়া পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জামানতের বাধা। যেসব উদ্যোক্তার কোল্যাটারেল নেই, তাঁদের জন্য আমরা বিকল্প মূল্যায়ন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় অর্থায়ন করছি। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব পণ্য ‘সূচনা’-এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা নামমাত্র জামানতে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন।

ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়েছে। এতে এসএমই উদ্যোক্তাদের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে?

আহসান জামান চৌধুরী: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মুদ্রানীতিতে কড়াকড়ি আরোপ এবং বাজার বাস্তবতায় সুদহার কিছুটা বেড়েছে, যা এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে—বিশেষ করে যাঁরা ছোট পরিসরে ব্যবসা করেন বা নতুনভাবে শুরু করছেন। তাঁদের জন্য মূলধনের খরচ বেড়ে যাওয়া একটি বাস্তব চ্যালেঞ্জ।

এই ঋণের আদায়ের হার কেমন?

আহসান জামান চৌধুরী: ট্রাস্ট ব্যাংকে সিএমএসএমই খাতে ঋণ আদায়ের হার অত্যন্ত সন্তোষজনক। আমরা এই খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে একটি সুশৃঙ্খল ও বহুমাত্রিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করি, যাতে প্রত্যেক উদ্যোক্তার প্রকৃত সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রযুক্তিনির্ভর ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্ট, মাঠপর্যায়ের যাচাই, এবং ঋণ–পরবর্তী নিয়মিত ফলোআপের ফলে আমরা গ্রাহকদের শুধু অর্থ নয়, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিতে পারি, যা আদায় নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যবসার স্থায়িত্বেও সহায়ক হয়।

উদ্যোক্তারা কি পণ্যের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে পারছেন? পণ্যের দাম কি পাচ্ছেন?

আহসান জামান চৌধুরী: সিএমএসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তার মধ্যেই বর্তমানে পণ্যের গুণমান নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে অনেকেই পণ্যের মান, প্যাকেজিং ও গ্রাহকসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। বিশেষ করে যাঁরা ই-কমার্স বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন, তাঁদের মানোন্নয়নের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে সব উদ্যোক্তার পক্ষে এখনো আন্তর্জাতিক মান বা বাজার প্রতিযোগিতায় পুরোপুরি টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

Newspaper: Prothomalo